কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরী এলাকায় এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভাড়া বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তাঁর মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছে।
ঘটনাস্থল ও প্রাথমিক তথ্য
আজ সোমবার (সকাল ৭টার দিকে) নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরী এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে রোববার গভীর রাতে নিহত পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি টের পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহিনুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যাচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে হত্যার সঠিক পদ্ধতি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
নিহতদের পরিচয়
নিহত দুইজন হলেন—কুমিল্লা নগরের সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৫২) এবং তাঁর মেয়ে সুমাইয়া আফরিন (২৩)।
সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তাঁরা প্রায় চার বছর ধরে কালিয়াজুরী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।
তাহমিনা বেগম দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা ছিলেন।
পরিবারের বক্তব্য
নিহত সুমাইয়ার বড় ভাই আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (ফয়সাল) জানান, রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে বাসায় ফিরে দরজা অস্বাভাবিকভাবে খোলা দেখতে পান। ভেতরে ঢুকেই প্রথমে বোনের ঘরে এবং পরে মায়ের ঘরে তাঁদের নিথর দেহ আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন,
“আমরা জানি না কে বা কারা এভাবে আমার মা ও বোনকে হত্যা করেছে। আমাদের কোনো শত্রু ছিল না। আমি ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
পুলিশের তদন্ত অগ্রগতি
ওসি মাহিনুল ইসলাম জানান, নিহতদের শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে মেয়েটির গলায় দাগ এবং মায়ের একটি চোখে রক্তাক্ত চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলের ভবনের নিচতলায় একটি স্কুল রয়েছে। পুলিশ সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নিহতদের ঘর থেকে তেমন কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। তাই ঘটনাটি ডাকাতি নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
শেষকথা
এই ঘটনা কুমিল্লা নগরীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এই হত্যাকাণ্ডে শোকাহত ও উদ্বিগ্ন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।