কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে সরকার। একজন সাংবাদিককে হয়রানিমূলকভাবে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বরখাস্তের সিদ্ধান্ত
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, গত ৮ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে সিনিয়র দায়রা জজ আদালত তা নামঞ্জুর করেন। মামলার প্রেক্ষিতে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এরপর সরকারি চাকরি আইন ২০১৮–এর ৩৯(২) ধারা অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ঘোষণা করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ে সুলতানা পারভীন কেবল বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খোরপোষ ভাতা পাবেন।
ঘটনার পটভূমি
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ গভীর রাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তার নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, তার বাসায় মদ ও গাঁজা পাওয়া গেছে। তবে পরিবার ও সহকর্মীদের দাবি, আরিফুলের লেখালিখির কারণে এই সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন।
পরবর্তী পদক্ষেপ ও শাস্তি
ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা দেখা দেয়। বিভাগীয় তদন্তে প্রথমে সুলতানাকে সামান্য শাস্তি দেওয়া হয়—দুই বছরের জন্য তার বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছিল। পরে সেই শাস্তি প্রত্যাহার করে তাকে মুক্ত করা হলেও ভুক্তভোগী সাংবাদিক আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার রায় অনুযায়ী বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন এবং প্রশাসনিকভাবে বরখাস্ত হলেন।
কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে সরকারি কর্মকর্তা যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, শেষ পর্যন্ত জবাবদিহির মুখোমুখি হতেই হয়। সাংবাদিক হয়রানির মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে সরকারের এমন পদক্ষেপ প্রশাসনিক জবাবদিহি ও বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার, আদালতের নির্দেশে কারাগারে