আফগানিস্তান আবারও এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬২২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় রবিবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে কুনার প্রদেশে আঘাত হানে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এই এলাকায় আকস্মিকভাবে ভূমিকম্প আঘাত করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বহু গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুনারের অন্তত তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ধসে গেছে এবং আশপাশের আরও অনেক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কেন এত বেশি প্রাণহানি ঘটল?
আফগানিস্তান ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। কারণ এটি এমন একাধিক সক্রিয় ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয়েছে। ভূমিকম্পের মাত্রা যদিও ৬.০ ছিল, তবে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ হলো এর কেন্দ্রস্থল অত্যন্ত অগভীর হওয়া।
রবিবারের ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে, যা ভূমিকম্পের প্রভাবকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
২০২২ সালে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। অগভীর কেন্দ্র হওয়ার কারণে দুই ভূমিকম্পই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনে।
অবকাঠামোর দুর্বলতা ও ঝুঁকি
আফগানিস্তানের ঘরবাড়িগুলো সাধারণত কাঠ, কাদামাটির ইট বা নিম্নমানের কংক্রিট দিয়ে তৈরি হয়। এসব স্থাপনা ভূমিকম্প সহনশীল নয়। ফলে সামান্য কম্পনেও সহজেই ধসে পড়ে এবং মানুষের মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে আরেকটি বড় বিপদ হলো ভূমিধস। শক্তিশালী ভূমিকম্পের সময় পাহাড় ধসে অনেক ঘরবাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। সড়কপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজও বিলম্বিত হয়, ফলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়ে।
উদ্ধারকাজের চ্যালেঞ্জ
দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো উদ্ধারকর্মীদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। ভাঙা সড়ক, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয় না। ফলে অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে জীবনের ঝুঁকিতে থাকেন।
উপসংহার
আফগানিস্তানে ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়, তবে প্রতিবারই মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি এতো ব্যাপক আকার ধারণ করে মূলত অবকাঠামোর দুর্বলতা, অগভীর ভূমিকম্প কেন্দ্র এবং দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থার কারণে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ভূমিকম্প সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ ও জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: চবিতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে উত্তেজনা, আহত অর্ধশতাধিক