১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে জড়ো হন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কিছু সদস্য শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে মিছিল করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে স্থানীয় জনতা গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ঘটনাটি শুধু ধানমন্ডি নয়, পাশের কলাবাগান ও পান্থপথ এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়।
ঘটনার বিস্তারিত
স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এক ব্যক্তি মোবাইল ভিডিও কলে কাউকে পরিস্থিতি দেখাচ্ছিলেন। ভিডিওতে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখা গেলে উপস্থিত কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ব্যক্তিকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ছাত্রশিবিরের কর্মীরা দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নিজস্ব ফোনেও একই ধরনের ছবি পাওয়া গেছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এর আগেই শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দলীয় কর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ কারণে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে যেকোনো সম্ভাব্য ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
রাত ৯টার দিকে একই এলাকায় আরও দুজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে কালো টি-শার্ট পরিহিত আরেকজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের আওয়ামী লীগ কর্মী বলা হচ্ছে কেন, সে বিষয়ে কেউ স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা “আ.লীগের দালাল হুঁশিয়ার” ও “জিয়ার সৈনিক এক হও” ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
পূর্ববর্তী একটি ঘটনার অভিযোগ
এর আগে ছাত্রশিবিরের ঢাকা কলেজ ইউনিটের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. মামুনকে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। এ সময় আহাদ নামে শিবিরের আরেক সদস্যকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের সদস্য মো. তাওহীদুল ইসলাম জানান, তারা সরাসরি প্রতিশোধ নিতে চাইলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতো, তাই নেতাদের সিদ্ধান্তে হামলাকারী একজনকে স্থানীয় ছাত্রদলের হাতে তুলে দেওয়া হয় যাতে তারা বিষয়টি সমাধান করে।
পুলিশের বক্তব্য
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জিসানুল হক বলেন, “কেউ যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।”
রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, মোট চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ফোন পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হলে ছেড়ে দেওয়া হবে, আর দোষী হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্রবেশপথে পুলিশি ব্যারিকেড বসানো হয়। যানবাহন ও পথচারীদের তল্লাশি ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছোট ছোট মিছিল এলাকা ঘিরে অবস্থান নেয়। রাত ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন শুনানিতে আদালতে উত্তেজনা