চাঁদাবাজির প্যান্ডোরা বাক্স খুললেন রিয়াদ
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টার্গেট করে চাঁদাবাজির একটি সুপরিচালিত সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল বলে জানা গেছে। এই চক্রের নেতৃত্বে থাকা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে চাঁদাবাজির নানা তথ্য। রিমান্ডে থাকাকালীন রিয়াদ স্বীকার করেছেন, তিনি ও তার সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদা আদায় করতেন।
পুলিশের অভিযানে উদ্ধার ৩ লাখ টাকা
গুলশান থানা পুলিশ গতকাল ভোরে বাড্ডার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে রিয়াদের থাকার কক্ষ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে। এই বাসাটি একটি সাধারণ মেস, যেখানে চারটি রুমের মধ্যে একটি রুমে একাই থাকতেন রিয়াদ। বাকি রুমগুলোতে অন্যান্য ছাত্ররা থাকেন। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, রিয়াদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
ঢাকায় রিয়াদের একাধিক ভাড়া বাসা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় রিয়াদের কমপক্ষে দুটি ভাড়া বাসা রয়েছে। একটি বাড্ডার বৈখাল এলাকায়, অন্যটি পশ্চিম রাজাবাজারে। বাড্ডার বাসায় তিনি নিয়মিত থাকতেন, অন্যটিতে মাঝে মধ্যে যেতেন। গত ২৬ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন রিয়াদ ও তার সহযোগীরা।
চাঁদাবাজির পদ্ধতি: ভীতি ও হুমকি
রিয়াদ ও তার দল কীভাবে চাঁদা আদায় করতেন? তাদের পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। তারা প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা খুঁজে বের করতেন। এরপর সরাসরি চাঁদা দাবি করতেন। টাকা না পেলে ‘মব’ তৈরি করার হুমকি দিতেন। এমনকি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ও দেখাতেন।
সাবেক এমপির কাছ থেকে ৫ কোটি টাকার চেক
একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো রংপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের অফিসে হামলা চালিয়ে ৫ কোটি টাকার চেক লিখিয়ে নেওয়া। রিয়াদের দল সেদিন অফিসে ঢুকে সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে তারা আজাদের টেবিলের ড্রয়ার থেকে চেকবই বের করে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
পুলিশের তদন্তে নতুন তথ্য
গুলশান থানা পুলিশের মতে, রিয়াদ ও তার সহযোগী গৌরব জামান (অপু) একটি বড় চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই চক্রের বিভিন্ন শাখা ছিল, যারা ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করত। রিয়াদের রিমান্ডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ এখন অপু ও অন্যান্য সন্দেহভাজনদের খুঁজছে।
ভুক্তভোগীরা কেন মামলা করতে চাইছেন না?
মজার বিষয় হলো, অনেক ভুক্তভোগীই প্রকাশ্যে মামলা করতে চাইছেন না। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এই চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। ফলে ভুক্তভোগীরা হয়রানি বা সামাজিক সমস্যার ভয়ে পুলিশে অভিযোগ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
শেষ কথা
চাঁদাবাজির এই সিন্ডিকেট শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে না, সমাজে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। পুলিশের তদন্ত এগিয়ে চললেও, এই ধরনের অপরাধ রোধে সামাজিক সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। আশা করা যায়, রিয়াদ ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এই চক্রের মূলোৎপাটনে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত: বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য সুখবর
#চাঁদাবাজি #রিয়াদ #গুলশানথানা #পুলিশঅভিযান #ঢাকাঅপরাধ