ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নারী পুলিশ ব্যারাকে এক নারী সদস্যের উপর শারীরিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত হিসেবে একই থানায় কর্মরত কনস্টেবল সাফিউর রহমানের নাম উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই নারী সদস্যকে মানসিক ও শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে।
কী ঘটেছিল?
ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য জানান, তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন। তখন থেকেই কনস্টেবল সাফিউর তার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। রমজান মাসের পর ঈদের এক রাতে তিনি একা থাকাকালে সাফিউর জোরপূর্বক তার কক্ষে প্রবেশ করে নির্যাতন চালান। এসময় ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে অভিযুক্ত কনস্টেবল।
নারী সদস্যের অভিযোগ অনুযায়ী, ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে গত কয়েক মাস ধরে তাকে একই ব্যারাকের ভেতরে একাধিকবার জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়। ভুক্তভোগী বলেন, বিষয়টি প্রকাশ করলে চাকরি হারানোর ভয় ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার আশঙ্কায় প্রথমে তিনি চুপ ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি সহ্যসীমার বাইরে চলে গেলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ন্যায়বিচারের জন্য আবেদন করেন।
মামলা করতে গিয়ে ভোগান্তি
ঘটনার প্রতিকার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগী নারী প্রথমে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে যান। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগ রয়েছে, থানার কিছু কর্মকর্তার প্রভাবের কারণে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি ভুক্তভোগীকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও তিনি জানান। তবে তিনি কোনো সমঝোতায় রাজি হননি।
অভিযুক্ত ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া
অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন জানান, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তদন্তাধীন রয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, “আমাদের পুলিশ বাহিনী একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ সংগঠন। ব্যারাকে এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ খুবই সীমিত। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সমাজে বার্তা
এ ধরনের ঘটনা শুধু ভুক্তভোগীর জন্য নয়, পুরো পুলিশ বাহিনীর সুনামকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে নারী পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ব্যারাকগুলোতে পর্যাপ্ত নজরদারি বাড়ানো সময়ের দাবি।
উপসংহার:
ঘটনাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। ভুক্তভোগী নারী সদস্য ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা, ভিপি-জিএস পদে যারা প্রার্থী