গত বছরের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনো তাজা থাকতেই আবারও প্রকৃতির রোষের শিকার হলো ফেনী। টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুধু ফেনীই নয়, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও দিনাজপুরের চরাঞ্চলেও বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ফেনীতে বন্যার ভয়াবহতা
ফেনীর পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় বিভিন্ন খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকার বেশি।
ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত
-
কৃষি খাত: ৭৫ কোটি টাকা (ফসল নষ্ট, জমি প্লাবিত)
-
প্রাণিসম্পদ: ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা
-
সড়ক ও অবকাঠামো: ৮২ কোটি টাকা
-
বাঁধ ক্ষতি: ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা
-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ৩৬ লাখ টাকা
-
স্বাস্থ্য খাত: ১৭ লাখ টাকা
-
বিদ্যুৎ বিভাগ: ৪৪ লাখ টাকা
ফেনী জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে।
গত বছর আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, যাতে ২৯ জন প্রাণ হারায় এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল শত কোটি টাকার বেশি। এবারের বন্যা সেই স্মৃতিকে আবারও উসকে দিয়েছে।
নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ
গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ভারী বৃষ্টির কারণে শহর ও আশেপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মাইজদী প্রেস ক্লাব সড়ক, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ায় চলাচলে চরম অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা না থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুরে সড়ক বিচ্ছিন্ন, চলাচল অসম্ভব
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারের পানির চাপে বলিরপোল-নাছিরগঞ্জ সড়ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সড়কটি এখন গভীর খালে পরিণত হয়েছে, যার ফলে প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাঁচা রাস্তাগুলো পানিতে ভেসে যাওয়ায় হাঁটু বা কোমর পর্যন্ত পানিতে হেঁটে যেতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেছেন, এলজিইডি বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দিনাজপুরের ১১০টি চরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তারা চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারি ও স্থানীয় ত্রাণ সহযোগিতা
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা আরও দ্রুত সহায়তা চেয়েছেন, বিশেষ করে যেসব এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপসংহার
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত, নদী ড্রেজিং এবং দ্রুত ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ১১ দিনের বিশেষ সতর্কতা: কেন জারি হলো এবং কী করবেন?
আপনার এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি কেমন? কমেন্টে জানান। পোস্টটি শেয়ার করে সবাইকে সচেতন করুন।
#বন্যা #ফেনী #নোয়াখালী #লক্ষ্মীপুর #দিনাজপুর #ত্রাণ #প্রাকৃতিক_দুর্যোগ