সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহ বুধবার এই আদেশ দেন। পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই সিদ্ধান্ত নেয়।
মামলার পটভূমি
২০১১ সালের ১০ মে, খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায় নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলছে। গত বছর ২৭ আগস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, খায়রুল হক “বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায়” দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে রায়ে জালিয়াতি করেছেন।
মামলার বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের সংক্ষিপ্ত আদেশ এবং ২০১২ সালের পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য ছিল। বাদীপক্ষের দাবি, খায়রুল হক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবে রায় পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে সহায়তা করেছিলেন।
আদালতে শুনানি ও রিমান্ডের আবেদন
আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খালেক মিয়া জানান, রায়ে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, “এই রায়ের কারণে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে এবং এর পরিণতি হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।”
খায়রুল হকের পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তবে, অভিযোগ শুনে তিনি “না, না” বলে প্রতিবাদ জানান। শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
অন্যান্য মামলা ও তদন্ত
এটি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলার মধ্যে একটি। গত বছর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায়ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে “বেআইনিভাবে প্লট বরাদ্দ” নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও সমালোচনা
এই মামলাটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার আদালতে বলেন, “খায়রুল হকের রায়ের কারণে দেশে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।” অন্যদিকে, সমর্থকদের মতে, এই মামলাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।
কী হতে পারে?
রিমান্ড শেষে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলার ফলাফল বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন: আপনি কী মনে করেন এই মামলার প্রভাব বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় কতটা গভীর হবে? নিচে আপনার মতামত জানান।
আরও পড়ুন: বিটিআরসির নতুন নীতিমালা: একটি এনআইডিতে সর্বোচ্চ কয়টি সিম ব্যবহারযোগ্য