মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত ও গাজার ওপর দীর্ঘদিনের অবরোধের মধ্যে মানবতার পক্ষ থেকে এক বিরাট উদ্যোগের সূচনা হয়েছে। ইসরায়েলের কঠোর নজরদারি ও বাধা উপেক্ষা করে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গাজার মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করেছে একটি বিশাল নৌবহর। এই নৌবহরকে সংগঠকরা “বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সমুদ্র মিশন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সমুদ্রপথে ৪৪ দেশের একত্রিত মানবতা
এই মিশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রায় ১০০টি জাহাজ এবং ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী মানুষ। নৌবহরের প্রথম অংশে রয়েছে ছোট আকারের জাহাজ, যেগুলোতে চিকিৎসক, মানবিক কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী এবং জরুরি চিকিৎসা ও খাদ্যসামগ্রী বহন করা হচ্ছে।
৩১ আগস্ট স্পেনের একটি বন্দর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বহরটি। পরে ৪ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়ায় আরও কিছু জাহাজ যুক্ত হয়ে শক্তিশালী বহরে রূপ নেয়।
বৈশ্বিক অংশগ্রহণ ও উদ্দেশ্য
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার তথ্য অনুযায়ী, ছয় মহাদেশের অংশগ্রহণকারীরা এতে যুক্ত হয়েছেন। স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই বহরে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অংশগ্রহণকারীরা কোনো রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন; তারা স্বেচ্ছায় নিপীড়িত গাজাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বহরের নেতৃত্ব ও কাঠামো
নৌবহরটি চারটি বড় কোয়ালিশনের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন—
চিকিৎসক ও মানবিক কর্মী
শিল্পী ও আইনজীবী
ধর্মীয় নেতা ও সমাজকর্মী
অভিজ্ঞ নাবিক ও স্বেচ্ছাসেবক
তাদের মূল বার্তা হলো— “গাজার অবরোধ অবিলম্বে শেষ হোক এবং চলমান গণহত্যা বন্ধ করা হোক।”
নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা
বার্সেলোনায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিরাপত্তার কারণে নৌবহরের জাহাজ ও গন্তব্য বন্দরের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে এই ফ্লোটিলার সময় লাগবে ৭ থেকে ৮ দিন।
ফ্লোটিলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ফ্লোটিলা মূলত এমন একটি নৌবহর, যা যুদ্ধ বা অবরোধে আটকে পড়া মানুষের কাছে খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেয়।
গাজায় স্থলপথ ও আকাশপথ বন্ধ থাকায় সমুদ্রপথই একমাত্র কার্যকর বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল গাজার আকাশসীমা ও জলসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া ২০০১ সালে ইয়াসির আরাফাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর থেকে গাজায় কার্যত কোনো বিমানবন্দর চালু নেই।
এ অবস্থায় ফ্লোটিলার এই অভিযান শুধু সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা নয়, বরং একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বার্তাও দিচ্ছে— গাজার অবরোধ বন্ধ করতে হবে।
উপসংহার
গাজায় মানবিক সংকট দীর্ঘদিন ধরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। খাদ্য, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের ঘাটতি লাখো মানুষকে দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই সময়ে বিশ্বের ৪৪ দেশের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া এই বিশাল নৌবহর মিশন শুধু সহায়তা নয়, বরং মানবতার পক্ষে এক বৈশ্বিক সংহতির প্রতীক।
আরও পড়ুন: নূরাল পাগলার দরবারে হামলা ও সহিংসতা: কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন ও অগ্নিসংযোগ