ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের মিছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২৮৩ জনে।
একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০৪ জন, ফলে মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জনে। অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত দলগুলোও অব্যাহত বোমা বর্ষণের কারণে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।
মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে হতাহত
শুধু বিমান হামলাই নয়, ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতেও প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মানবিক সহায়তা সংগ্রহের সময় সেনাদের গুলিতে ৫ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫২৩ জনে পৌঁছেছে।
ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে শিশুদের মৃত্যু
যুদ্ধের পাশাপাশি গাজার মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শিশু রয়েছে অন্তত একজন। এ নিয়ে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধাজনিত কারণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪০ জনে, যার মধ্যে ১৪৭ জন শিশু।
আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা আইপিসি গত মাসেই গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছিল। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত শুধু ক্ষুধার কারণে মারা গেছেন ১৬২ জন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ ও নতুন হামলা
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারও গাজায় বড় ধরনের হামলা শুরু করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১২ হাজার ৭২৪ জন, আহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৫৩৪ জন।
আন্তর্জাতিক চাপ ও মামলা
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তবুও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের হয়েছে।
উপসংহার
গাজায় প্রতিদিনই যেন নতুন করে রচিত হচ্ছে ট্র্যাজেডির ইতিহাস। বোমা, গুলি, ক্ষুধা ও অপুষ্টি মিলিয়ে পুরো অঞ্চলটি এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের নাম। বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো শান্তির জন্য সরব হলেও কার্যকর সমাধান এখনও অধরা।
আরও পড়ুন: পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতের তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা