গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতি
গোপালগঞ্জে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ চারটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করে অজ্ঞাতনামা ৫,৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও, জেলায় চলমান অভিযানে ইতোমধ্যে ৩২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি দাবি করছে, নিরীহ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে এই গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
ঘটনার বিস্তারিত
গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ পরবর্তী সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। নিহতরা হলেন:
-
দীপ্ত সাহা (২৫), গোপালগঞ্জ পৌরসভা
-
সোহেল রানা মোল্লা (৩৫), টুঙ্গিপাড়া উপজেলা
-
রমজান কাজী (১৮), কোটালীপাড়া উপজেলা
-
ইমন তালুকদার (১৮), ভেড়ার বাজার
-
রমজান মুন্সী (৩৫), থানাপাড়া
নিহতদের মধ্যে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানার চারজন উপপরিদর্শক (এসআই) মামলা দায়ের করেছেন। মামলাগুলোতে দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ১৫৩, ৩০৭, ৩০২ ও ৩৪ ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
মামলায় আসামিদের তালিকা
-
সোহেল রানা মোল্লা হত্যা মামলা: অজ্ঞাতনামা ৯০০ জন
-
দীপ্ত সাহা হত্যা মামলা: অজ্ঞাতনামা ১,৫০০ জন
-
ইমন তালুকদার হত্যা মামলা: অজ্ঞাতনামা ১,৫০০ জন
-
রমজান কাজী হত্যা মামলা: অজ্ঞাতনামা ১,৫০০ জন
এছাড়াও, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আগে থেকেই আরও চারটি মামলা রয়েছে, যেখানে ২,৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
গোপালগঞ্জে বুধবারের ঘটনার পর থেকে জেলায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রবিবার সকালে কারফিউ প্রত্যাহার করা হলেও জনসমাগম ও রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে স্থানীয় বিএনপি অভিযোগ করছে যে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, “পুলিশ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করছে।” উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস. এম. মহিউদ্দিন বলেন, “ওয়াপদার হাটে সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। বদলে নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।”
প্রশাসনের বক্তব্য
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, “আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজ করছি। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তবে স্থানীয়রা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
সাম্প্রতিক উন্নয়ন
-
কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়েছে, তবে ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে।
-
পুলিশের ব্যাপক তল্লাশি অভিযান অব্যাহত আছে।
-
বিএনপি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে যদি নিরীহ মানুষের গ্রেপ্তার বন্ধ না হয়, তাহলে তারা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
শেষ কথা
গোপালগঞ্জের এই ঘটনা রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের ব্যাপক মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযানের পাশাপাশি বিরোধী দলের অভিযোগ প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে এই সংকট সমাধান করে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার শাসনকে ক্ষমা করা যাবে না: মির্জা ফখরুলের তীব্র প্রতিক্রিয়া
আপনার মতামত জানান: এই ধরনের ঘটনায় কীভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়? নিচে কমেন্টে আপনার ভাবনা শেয়ার করুন।