বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বা পে-স্কেল সবসময়ই একটি আলোচিত বিষয়। সম্প্রতি সরকার নতুন একটি পে কমিশন গঠন করেছে, যা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পর্যালোচনা করছে। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিগগিরই নতুন পে-স্কেল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কেন এখনই ঘোষণা আসছে না?
সরকারি সূত্র বলছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে নির্বাচনের আগে বড় ধরনের আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সরকার খুব সতর্ক। অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার সম্ভাবনা কম।
তবে ইতোমধ্যেই গঠিত পে কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৪ আগস্ট। এখান থেকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর সরকার সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নতুন বেতন কাঠামো তৈরি করবে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে সেটি বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা বেশি।
বর্তমান বেতন কাঠামো ও নতুন পরিকল্পনা
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২০টি গ্রেডভিত্তিক বেতন কাঠামো চালু রয়েছে। ২০১৫ সালের পে-স্কেলের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পান। তবে নতুন বেতন কাঠামোতে গ্রেডের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবারের কমিশন বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে—
বেতন বৈষম্য দূরীকরণ
মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার খরচ সামঞ্জস্য করা
কর্মচারীদের অসন্তোষ দূর করার উদ্যোগ
আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে টেকসই কাঠামো প্রণয়ন
এছাড়া, নতুন কাঠামো কার্যকর হওয়ার আগে সরকারি কর্মচারীরা নিয়ম অনুযায়ী মহার্ঘভাতা (DA/Cost of Living Allowance) পেতে থাকবেন।
অর্থনীতিবিদদের মতামত
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, কমিশনকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সময়োপযোগী একটি বেতন কাঠামো তৈরি করা, যা দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা ও মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণে ঘোষণা কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। বাস্তবায়নের দায়িত্ব নতুন সরকারের উপর বর্তাবে।”
কেন এই পে-স্কেল গুরুত্বপূর্ণ?
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নিয়মিত পে-স্কেল অত্যন্ত জরুরি। অতীতে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করার নিয়ম ছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী সরকার সেই নিয়ম বাতিল করায় অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই নতুন কাঠামো ঘোষণাকে ঘিরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
উপসংহার
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ঘোষণা হবে, তবে তা নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নয়। পে কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে সেই অনুযায়ী বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে। ততদিন পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীরা মহার্ঘভাতা পাবেন।
এটি শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধির বিষয় নয়, বরং কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথেও সম্পর্কিত। তাই সবাই অপেক্ষা করছে সময়োপযোগী ও ন্যায্য একটি বেতন কাঠামোর জন্য।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ: তিন দাবিতে আল্টিমেটাম