বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ২১৬৯টি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। তাদের দাবি, এই বিজ্ঞপ্তি অবৈধ এবং তা সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য অধিকারকে উপেক্ষা করেছে।
মানববন্ধনে শিক্ষকদের প্রতিবাদ
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসি কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেখানে উপস্থিত শিক্ষক নেতারা এককথায় ঘোষণা দেন যে, প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়া তারা মেনে নেবেন না।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন—
“সহকারী শিক্ষকরা বহু বছর ধরে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। অথচ পিএসসি সম্প্রতি এমন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যা শুধু অবৈধ নয়, বরং শিক্ষক সমাজের প্রতি অবিচার।”
তিনি আরও যোগ করেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কোনো ধরনের তামাশা বরদাশত করা হবে না এবং এই বিজ্ঞপ্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
সমর্থনে অন্যান্য সংগঠন
মানববন্ধনে শুধু শিক্ষক সমাজ নয়, অন্যান্য সংগঠন থেকেও সংহতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতা মো. বাদিউল কবীর সেখানে উপস্থিত থেকে শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
এছাড়া মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন শাহীন, নীতি নির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী সভাপতি পংকজ কান্তি আইচসহ আরও অনেকে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষক নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিজ্ঞপ্তির মূল শর্তাবলী
গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী—
প্রধান শিক্ষক পদে ২১৬৯ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য ১১তম গ্রেড এবং প্রশিক্ষণবিহীনদের জন্য ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে)।
আবেদনকারীদের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে এবং শিক্ষাজীবনে কোনো স্তরে তৃতীয় শ্রেণি/সমমানের জিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না।
কেন এই বিরোধিতা?
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দাবি হলো—
বহু বছর ধরে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন।
শতভাগ পদোন্নতির দাবিটি একটি দীর্ঘদিনের আন্দোলন।
সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে।
এতে অভিজ্ঞ ও দীর্ঘদিন কর্মরত শিক্ষকদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে।
উপসংহার
প্রাথমিক শিক্ষা বাংলাদেশের মূলভিত্তি। তাই এই খাতে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা বা অবিচার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা এবং একটি ন্যায্য সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫