গাজার প্রাথমিক স্থল অভিযান শুরু
ফিলিস্তিনের ঘনবসতিপূর্ণ গাজা শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্থল অভিযান শুরু করেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ভয় এবং ক্ষুধার্ত অবস্থায় নিরাপদ স্থানের দিকে দৌড়াচ্ছে। গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শহরের উপকণ্ঠে ইতিমধ্যেই সেনাদের ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে।
বোমাবর্ষণ ও আর্টিলারি হামলা
ইসরায়েলি সেনারা পরিকল্পিত স্থল অভিযান শুরু করার আগে শহরের বিভিন্ন অংশে তীব্র বোমাবর্ষণ এবং আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে জেইতুন এবং জাবালিয়া এলাকায় সেনারা অভিযান চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে শত শত মানুষ চলে যাচ্ছেন।
নাগরিকদের মানবিক পরিস্থিতি
গাজার ১০ লাখের বেশি বাসিন্দা এখন এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, “এই আক্রমণ মৃত্যু ও ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখেও ইসরায়েল পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনায় অটল।
রাজনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপট
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ গাজা দখলের পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। আগামী সেপ্টেম্বরে ৬০ হাজার সংরক্ষিত সেনাকে অভিযানে মোতায়েন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি শেষ সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো দখলের সময়সীমা সংক্ষিপ্ত করতে চাইছেন।
অপরদিকে হামাস অভিযোগ করেছে, নেতানিয়াহু নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতা চালাচ্ছেন এবং আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে উপেক্ষা করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, গাজা দখলের এই পদক্ষেপ দুই জাতির জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং পুরো অঞ্চলে স্থায়ী সংঘাত সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সতর্ক করেছে, বাস্ত্যুচ্যুতি ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে গাজার ২১ লাখ মানুষের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সিভিলিয়ান সুরক্ষা ও জিম্মি পরিস্থিতি
আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানিয়েছেন, জেইতুনে দুটি ব্রিগেড এবং জাবালিয়ায় আরেকটি ব্রিগেড অভিযান চালাচ্ছে। জেইতুনে অস্ত্রভর্তি একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গও শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে শহরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে হামাসের সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানিয়েছেন, জেইতুন ও সাবরা এলাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ংকর।
এদিকে অভিযানে এখনও প্রায় ৫০ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিম্মিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে, তবে পরিবারগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উপসংহার
গাজা সিটিতে ইসরায়েলি স্থল অভিযান এবং লাখো ফিলিস্তিনির নিরাপত্তাহীনতা এখন আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। মানবিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং স্থল অভিযান—এই তিনটি দিকেই গাজার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন: আবারও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ : সীমান্তে টান টান পরিস্থিতি