জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর আয়োজিত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ভোটগ্রহণ ও অংশগ্রহণ
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে কয়েকটি হলে ভোটগ্রহণ দেরিতে শেষ হয়। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে প্রায় ৬৭ থেকে ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে মোট ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভিপি পদে লড়েছেন ৯ জন এবং জিএস পদে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। অন্যদিকে ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে মোট ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। একক প্রার্থী ছিলেন ৬৭টি পদে। ফলে ভোটগ্রহণ হয়েছে মাত্র ২৪টি পদে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের মধ্যে দুটি হলে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনায় বিলম্বের কারণ
ভোট গণনায় বিলম্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম জানিয়েছেন, বেশ কিছু কারণে গণনায় দেরি হয়েছে।
প্রথমে পরিকল্পনা ছিল ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করার, কিন্তু কিছু প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে ম্যানুয়ালি গণনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে সময় বেশি লেগেছে। এছাড়া কয়েকটি হলে ভোটগ্রহণ দেরিতে শুরু হয় এবং শেষ পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক ভোটার একসাথে আসায় ব্যালট বাক্স সংগ্রহে সময় লেগেছে। সব কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স আসার আগ পর্যন্ত গণনা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
রাশিদুল আলম বলেন,
“ম্যানুয়ালি গণনার কারণে শুরুতে ধীরগতিতে কাজ হয়েছে। তবে এখন গতি বেড়েছে। বর্তমানে সিনেট ভবনে ১০টি টেবিলে গণনা চলছে, প্রতিটি টেবিলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে যেন সবাই পর্যবেক্ষণ করতে পারে।”
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন,
“প্রতি হলে ভোট গণনায় প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এরপর জাকসুর ২৫টি পদ গণনা করতে আরও দ্বিগুণ সময় লাগবে। দ্রুত ফল প্রকাশ করতে হলে ওএমআর পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত ছিল।”
অন্যদিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবীবা জানান,
“গতকাল সন্ধ্যা থেকে আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কখন ফলাফল আসবে। এতে নির্বাচনের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে।”
কমিশনের প্রত্যাশা
নির্বাচন কমিশনের আশা, সব জটিলতা কাটিয়ে শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ হবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। তবে শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, বিলম্ব না করে দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করা হোক, যাতে তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার, আদালতের নির্দেশে কারাগারে