জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সিন্ডিকেটের সভায় ৬৪ জন চলমান শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ৭৩ জন সাবেক শিক্ষার্থীর সনদ স্থায়ীভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
গত বছরের জুলাই মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) একদল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের ওপর নির্মম হামলা চালায়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যা সারা দেশে আলোচিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং দীর্ঘ তদন্তের পর দোষীদের শাস্তির আওতায় আনে।
শাস্তির বিস্তারিত
সোমবার (৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান এক ব্রিফিংয়ে শাস্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন।
বর্তমান শিক্ষার্থীদের শাস্তি:
-
৬৪ জন → আজীবন বহিষ্কার
-
৩৭ জন → ২ বছরের জন্য বহিষ্কার
-
৮ জন → ১ বছরের জন্য বহিষ্কার
-
১ জন → ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার
-
২০ জন → তদন্তের পর অব্যাহতি
সাবেক শিক্ষার্থীদের শাস্তি:
-
৭৩ জন → সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল
-
৬ জন → সনদ ২ বছরের জন্য স্থগিত
-
২০ জন → অভিযোগ থেকে অব্যাহতি
মোট ২২৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৩০ জন বর্তমান ও ৯৯ জন সাবেক শিক্ষার্থী ছিল।
বহিরাগত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
উপাচার্য জানান, হামলায় বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যের ভূমিকা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেহেতু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের আওতাভুক্ত নয়, তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (আইসিটি)-এ পাঠানো হবে।
শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা
জাবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়কে প্রতিফলিত করে। উপাচার্য ড. কামরুল আহসান বলেন, “আমরা কখনই সহিংসতা ও অপরাধকে প্রশ্রয় দেব না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শেষ কথা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অপরাধীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা ও অনিয়মের কোনো স্থান নেই। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ: রায়ের বাজার কবরস্থান থেকে ১১৪ মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু
#জাবি #জাহাঙ্গীরনগর_বিশ্ববিদ্যালয় #শিক্ষাঙ্গন_শান্তি #গণঅভ্যুত্থান #শাস্তি