গাজীপুর মহানগরীতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তার ব্যস্ততম এলাকায় প্রকাশ্যে তাঁকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। নিহত তুহিন দৈনিক ‘প্রতিদিনের কাগজ’-এর গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন।
তিনি পরিবারসহ দীর্ঘদিন ধরেই গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করতেন। তার স্থায়ী ঠিকানা ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ:
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকেলে তুহিন ফেসবুক লাইভে আসেন এবং চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ফুটপাত ও দোকানপাটে চাঁদাবাজি নিয়ে সরব হন। লাইভে তিনি এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। এরপর রাত ৮টার দিকে নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে রাস্তা পারাপারের বিশৃঙ্খল চিত্র তুলে ধরেন এবং ক্যাপশনে লেখেন: “যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য। গাজীপুর চৌরাস্তা।”
এই পোস্টের কিছু সময় পরেই তিনি মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। তখনই ৩-৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পুলিশি পদক্ষেপ:
ঘটনার পরপরই বাসন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তা ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। বাসন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন খান জানান, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা। তদন্ত চলছে, বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
তুহিনের মৃত্যুতে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই দাবি করেছেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তুহিনের প্রকাশ্য অবস্থানই হয়তো তার হত্যার কারণ হতে পারে।
একজন সাধারণ মানুষ ও সাহসী সাংবাদিক হিসেবে তার নির্ভীক প্রতিবাদ এবং সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এই সাহসের মূল্য দিতে হলো তাকে নিজের জীবন দিয়ে।
উপসংহার:
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যখন কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হন। প্রশাসনের উচিত এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
সাংবাদিক তুহিনের আত্মত্যাগ যেন অপচয় না হয়—এই প্রত্যাশায় দেশের মানুষ, বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীরা একসাথে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত