ফুটবল বিশ্বে লিওনেল মেসি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, তিনি কোটি ভক্তের হৃদয়ের অনন্ত আবেগ। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আর্জেন্টিনার জার্সিতে যেভাবে তিনি প্রতিটি মুহূর্তকে ইতিহাসে পরিণত করেছেন, তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তবে সময়ের নিয়মে সব কিছুরই শেষ আসে। এবার সেই শেষের ঘণ্টাধ্বনি বাজছে আর্জেন্টিনার মাটিতেই—বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শেষবারের মতো মাঠে নামছেন মেসি।
বিদায়ের আভাস
আগামী বৃহস্পতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে) বুয়েনস আয়ার্সের বিখ্যাত মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে নামবেন তিনি। ভক্তরা জানেন, এই ম্যাচ শুধু একটি ফুটবল খেলা নয়, বরং এটি বিদায়ের আবেগমাখা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ৩৮ বছর বয়সী মেসির কাছে এখন আর কিছু প্রমাণ করার নেই। দুটি কোপা আমেরিকা, কাতারে বিশ্বকাপ জয়, আর অসংখ্য ব্যক্তিগত অর্জন তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
কোচ লিওনেল স্কালোনি এ প্রসঙ্গে স্পষ্টই বলেছেন—
“মেসির উত্তরসূরি বলে কিছু নেই। তার জায়গা কেউ নিতে পারবে না। আমরা এখন শুধু ভাগ্যবান যে তাকে উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছি।”
ম্যাচের গুরুত্ব বনাম আবেগ
আর্জেন্টিনা ইতিমধ্যেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে তারা শীর্ষে রয়েছে। ভেনেজুয়েলা এবং ইকুয়েডরের বিপক্ষে এই শেষ দুটি ম্যাচে জয়ের চাপ নেই বললেই চলে। তবে মাঠের বাইরের আবেগ সীমাহীন। মেসির শেষ নাচ দেখতে লাখো মানুষ মুখিয়ে আছে।
একইসঙ্গে স্কালোনি সতর্ক করে দিয়েছেন, আর্জেন্টিনাকে মেসির যুগের পরও শক্তিশালী থাকতে হবে। নতুন প্রতিভাদের পরীক্ষার সুযোগ হিসেবেও এই ম্যাচগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
মেসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও মেসি এখনও নিশ্চিত করেননি ২০২৬ বিশ্বকাপই তার শেষ আসর হবে কিনা, তবে বাছাইপর্বে আর না খেলার আভাস দিয়েছেন। বর্তমানে ক্লাব ফুটবলে ইন্টার মায়ামির হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন তিনি—এই মৌসুমেই ২৭ গোল ও ১১টি অ্যাসিস্ট। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওপর চাপ বাড়ছেই, সে ব্যাপারে সচেতন তিনিও।
নিজের দেশের ভক্তদের সামনে প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি অমূল্য মনে করেন। মেসির নিজের ভাষায়—
“এটা আমার জন্য খুবই বিশেষ ম্যাচ। শেষবারের মতো দেশের মাটিতে বাছাইপর্বে নামছি, তাই এটি কোনোভাবেই ভোলার মতো নয়।”
মনুমেন্তালের স্মৃতি আর ভক্তদের আবেগ
মনুমেন্তাল স্টেডিয়াম বহুবার আর্জেন্টিনার জয়, পরাজয়, অশ্রু আর উল্লাসের সাক্ষী হয়েছে। এবার সেই মাঠই আবার ইতিহাস রচনা করবে। ফলাফল যাই হোক না কেন, ভক্তদের চোখে থাকবে অশ্রু, আর হৃদয়ে থাকবে গর্ব। কারণ, মেসি শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি এক অনুভূতির নাম।
উপসংহার
যখন মেসি শেষবারের মতো আর্জেন্টিনার মাটিতে বাছাইপর্বে নামবেন, তখন পুরো দেশ তাকে বিদায় জানাবে এক নতুন আলোয়। ফলাফল নয়, এই ম্যাচের আসল শক্তি হবে আবেগ, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। কারণ, লিওনেল মেসি চিরকালই থাকবেন ভক্তদের হৃদয়ে—এক জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে।
আরও পড়ুন: Nurul Hasan: স্থিতিশীলতার সন্ধানে ফিরে আসা বাংলাদেশের উইকেটকিপার