রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজ রবিবার (৩ আগস্ট) পুনরায় চালু হচ্ছে। বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনার ১২ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আবারও শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলছে। তবে প্রথম দিনে কোনো নিয়মিত ক্লাস বা পরীক্ষা না হয়ে বরং নিহতদের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
শোক ও স্মরণ: প্রথম দিনের কর্মসূচি
গত ২১ জুলাইয়ের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর কলেজটি বন্ধ ছিল। প্রথমে ২৭ জুলাই খোলার কথা থাকলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় ছুটি বাড়ানো হয়। আজকের দিনটি মূলত শোক, শ্রদ্ধা ও মানসিক পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নিহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্মরণে একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হবে।
এক মিনিট নীরবতা পালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করা হবে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং সেশন রাখা হয়েছে।
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করা। আমরা চাই তারা শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আবারও নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমে ফিরে আসুক।”
২১ জুলাইয়ের ভয়াবহ দুর্ঘটনা
গত ২১ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন কলেজের ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি ভবনে আঘাত হানার পরই ভয়াবহ আগুন ধরে যায়, যা নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে। এই দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী।
এমনই একজন নিহত ছিলেন মাসুকা বেগম, সহকারী শিক্ষিকা, যিনি নিজে বাঁচার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দেন। তাঁর দুলাভাই খলিলুর রহমান জানান, “মাসুকা আপা চাইলে নিজে বেরিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তিনি ছাত্রছাত্রীদের আগে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।”
নতুন করে শুরু: নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
কাউন্সেলিং সেশন: মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিকল্পনা: ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে কলেজ ক্যাম্পাসে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হচ্ছে।
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কার্যক্রম: আগামী কয়েকদিন শুধু সংক্ষিপ্ত ক্লাস ও মানসিক সহায়তা কার্যক্রম চলবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী এখনও ভয় ও শোকের মধ্যে আছেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপে তারা কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন। একজন অভিভাবক বলেন, “আমরা চাই আমাদের সন্তানরা আবারও নিরাপদে পড়াশোনা করতে পারুক। কলেজ কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ ইতিবাচক।”
শেষ কথা
মাইলস্টোন কলেজের এই পুনরায় চালু হওয়া শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের পুনরুদ্ধার নয়, বরং একত্রে শোক কাটিয়ে উঠার একটি প্রচেষ্টা। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবারও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এই সংকল্প সকলের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।
আমরা নিহতদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।