রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো জাতি শোকাহত। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৫ জনই স্কুল শিক্ষার্থী। এছাড়াও বহু আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের অনেকে মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছেন। এমন বেদনাদায়ক ঘটনা আমাদের সবার মনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।
এই ট্র্যাজেডি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেই নয়, পুরো সমাজকেই এক ধরনের মানসিক আঘাত দিয়েছে। বিশেষ করে যারা সরাসরি এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাদের জন্য এই ট্রমা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত কঠিন। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব—কীভাবে এই শোক ও মানসিক আঘাত থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসা যায়।
১. শোককে স্বীকৃতি দিন
যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শোক প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া। কান্না করা, দুঃখ প্রকাশ করা—এগুলো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। অনেকেই শোককে চেপে রাখার চেষ্টা করেন, যা পরবর্তীতে মানসিক চাপ বাড়ায়। তাই আবেগ প্রকাশ করতে দিন নিজেকে এবং অন্যদেরও।
২. দোষারোপ থেকে বিরত থাকুন
এ ধরনের দুর্ঘটনার পর অনেকেই নিজেদের বা অন্যদের দোষ দিতে শুরু করেন—
-
“আমি যদি সেদিন শিশুটিকে স্কুলে না পাঠাতাম!”
-
“যদি একটু আগেই ওকে নিয়ে চলে আসতাম!”
এ ধরনের চিন্তা স্বাভাবিক, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। দুর্ঘটনা কারো ইচ্ছায় বা ভুলে হয়নি। তাই নিজেকে বা অন্যকে দোষ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. মানসিক সহায়তা নিন
যারা এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের জন্য প্রফেশনাল কাউন্সেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুরা এ ধরনের ট্রমা থেকে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এ ভুগতে পারে। লক্ষণগুলো হতে পারে—
-
ঘুমের সমস্যা
-
স্কুল বা জনসমাগমে ভয় পাওয়া
-
বারবার দুর্ঘটনার কথা মনে পড়া
-
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
এসব ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক সংস্থা বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিয়ে থাকে।
৪. শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা। যারা বেঁচে গেছে, তাদের অনেকেই হয়তো সহপাঠী বা বন্ধু হারিয়েছে। তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে হবে—
-
কথা বলুন: শিশুকে জোর করবেন না, তবে তাকে জানান যে সে নিরাপদ।
-
শুনুন: শিশু যদি ঘটনার কথা বলতে চায়, মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
-
সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন: আঁকা, গান বা গল্প লিখতে দেওয়া হলে শিশুরা নিজের ভেতরের ভয় প্রকাশ করতে পারে।
স্কুল কর্তৃপক্ষেরও উচিত কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন করা, যাতে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
৫. মিডিয়া এক্সপোজার কমিয়ে আনুন
এই দুর্ঘটনার ভিডিও, ছবি বা খবর বারবার দেখলে ট্রমা আরও গভীর হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের এসব থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করুন।
৬. ধীরে ধীরে রুটিনে ফিরুন
ট্রমা কাটানোর অন্যতম উপায় হলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া।
-
স্কুল বা কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসুন।
-
হালকা ব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।
-
পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।
৭. সমাজের পাশে দাঁড়ান
এমন সময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকুন, রক্তদান করুন, প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা দিন। সামাজিক ঐক্য আমাদের এই দুঃসময়ে শক্তি দেবে।
উপসংহার
মাইলস্টোন কলেজের এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সবার হৃদয়ে গভীর দাগ রেখে গেছে। তবে শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমরা এগিয়ে যাব। যারা হারিয়েছেন, তাদের স্মরণ করে আমরা আরও সচেতন ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলব।
আরও পড়ুন: মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা: শিশুদের জীবন সংকটে, বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা
আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা কমেন্টে শেয়ার করুন। একসাথে আমরা শোককে জয় করব।