রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আজ মঙ্গলবার সকালে স্কুল পরিদর্শন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর এ ঘোষণা দেন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত পটভূমি
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ২৭ জনের মৃত্যু ও ৭৮ জনের আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি, যা গোপন করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে বিক্ষোভ শুরু করেন। আজ সরকার এসব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে:
-
নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ – সরকার নিহত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হবে।
-
আহতদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ – সরকারি হিসাবের বাইরে আহতদের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিচয় জানাতে হবে।
-
সেনাবাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপের জন্য ক্ষমা চাওয়া – শিক্ষকদের ওপর হাত তোলার ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে।
-
নিহত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া – বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
-
পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল – বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত পুরনো বিমানগুলো প্রতিস্থাপন করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু করতে হবে।
-
প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সংস্কার – বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি আরও মানবিক ও নিরাপদ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটে।
সরকারের পদক্ষেপ ও পরিদর্শন
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ সকালে মাইলস্টোন স্কুল পরিদর্শন করেন। দুপুরে তারা স্কুলের ৫ নম্বর ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান।
হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক
সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু ও ৭৮ জনের আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা শতাধিক হতে পারে এবং অনেক আহতকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ দাবি অস্বীকার করে বলেছে, হতাহতের সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে না।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী?
এ ঘটনার পর বিমানবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলেও এখন দেখার বিষয়, কতটা দ্রুত ও কার্যকরভাবে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়।
শেষ কথা
মাইলস্টোন স্কুলের এ ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের পুরো বিমান প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা এবং ভবিষ্যতে যেন এমন মর্মান্তিক ঘটনা না ঘটে, সে জন্য কঠোর নজরদারি ও সংস্কার করা।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০, আহত ১৭১: সর্বশেষ তথ্য
আপনার মতামত জানান:
আপনার কী মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে? সরকারের সিদ্ধান্ত যথেষ্ট কি না? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।