কুমিল্লার তিতাসে সড়কের পাশে গলা কাটা এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গভীর তদন্ত করে এই হত্যাকাণ্ডের নৃশংস পেছনের গল্প প্রকাশ করেছে। পরকীয়া প্রেমের জেরে মাকে ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে মেয়েকেও শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে নিহত ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে। এর প্রতিশোধ নিতেই তাকে হত্যা করা হয়।
কে এই নিহত যুবক?
নিহত ইমতিয়াজ (২২) বরিশালের কাজীরহাট থানার বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন ধরে সোহেল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখত। এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে সোহেল স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু ইমতিয়াজ সোহেলের মেয়েকে (১৫) তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের ভিডিও দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখায় এবং তাকেও ধর্ষণ করে।
হত্যার নৃশংস পরিকল্পনা
সোহেল ইসলাম, তার ছেলে শাহীন (১৯) ও মামা হানিফ হাওলাদার (৬১) ইমতিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা তাকে সিলেট বেড়ানোর লোভ দেখিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে কুমিল্লার তিতাসে নিয়ে আসে। গাড়িতেই শ্বাসরোধ করে তাকে অচেতন করা হয়। পরে সড়কের পাশে গলা কেটে হত্যা করে তারা।
পুলিশের তদন্ত ও গ্রেপ্তার
ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর পিবিআইয়ের ক্রাইমসিন টিম তদন্ত শুরু করে। ডিজিটাল ফরেনসিক ও সেলফোন ডেটা বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হয়। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও রাজাবাজার থেকে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং সমাজের নৈতিক অধঃপতনের চিত্র তুলে ধরে। পরকীয়া, প্রতিশোধ, ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ কীভাবে একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তদন্ত ও গ্রেপ্তার নিশ্চিত করেছে ন্যায়বিচার। তবে সমাজে এ ধরনের অপরাধ রোধে সচেতনতা ও নৈতিক শিক্ষা জরুরি।
আইনের কঠোরতা জরুরি
অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, হত্যা ও প্রতিশোধমূলক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রয়োজন। পাশাপাশি, সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে সেমিনার ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এই ঘটনা আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে—অপরাধের বিরুদ্ধে শুধু আইনই যথেষ্ট নয়, নৈতিক মূল্যবোধও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: ১২ বছরের মেয়েকে কৌশলে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা