এক ট্র্যাজেডি যে গল্প বলছে মাতৃত্বের ত্যাগের
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার এক সাধারণ মা, উম্মে হাবিবা রজনী। প্রতিদিনের মতো সেদিনও মেয়ে ঝুমঝুমকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে আসেননি। ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
কী হয়েছিল সেই ভয়াল দিনে?
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ভোররাত। গাংনীর মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট গ্রামে হাবিবার মরদেহ পৌঁছালে চারদিক কেঁদে ওঠে। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে যায় বাতাস। সকাল ৯টায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সাজিপুর গ্রামে স্বামীর বাড়িতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
হাবিবার স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, “সেদিন দুপুরে একসাথে খাওয়ার কথা ছিল। রান্না শেষ করে মেয়েকে আনতে বেরোনোর আগে হাবিবা বলেছিল, ‘ফিরে এসে একসাথে খাবো’। কিন্তু সে আর ফিরল না…”
এক মায়ের শেষ যাত্রা
৩৭ বছরের হাবিবা উত্তরার একটি ভাড়াবাসায় স্বামী ও একমাত্র মেয়ে ঝুমঝুমকে নিয়ে থাকতেন। মেয়েকে স্কুলে রেখে অপেক্ষা করছিলেন, এমন সময় আকাশ থেকে ভেঙে পড়ে একটি প্রশিক্ষণ বিমান। আগুনে ঝলসে যায় তার শরীর। দ্রুত সিএমএইচে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।
অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, ঝুমঝুম গুরুতর আহত হলেও বেঁচে যায়। কিন্তু তার মা চলে যান অনন্তলোকে।
গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
হাবিবা ছিলেন মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবদুল হামিদের কন্যা। তার মৃত্যুতে বাওট গ্রাম শোকস্তব্ধ। প্রতিবেশীরা তাকে স্মরণ করেন এক অমায়িক, স্নেহশীলা নারী হিসেবে।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, হাবিবার মরদেহ গ্রামে আনার পর শান্তিপূর্ণ জানাজা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
একটি পরিবারের ভাঙন
ঝুমঝুম এখন বাবার সঙ্গে। কিন্তু যে মা তাকে আগলে রাখতেন, তিনি নেই। জহুরুল ইসলামের কণ্ঠে বেদনা: “আমাদের ডাইনিং টেবিল এখন ফাঁকা। মেয়ে জিজ্ঞাস করে—‘বাবা, মা কবে ফিরবে?’ কী উত্তর দেব আমি?”
শেষ কথা
মাতৃত্বের মমতা কত গভীর, তার প্রমাণ রেখে গেলেন হাবিবা। একটি অসতর্ক মুহূর্ত কেড়ে নিল এক মাকে। এই ঘটনা আমাদের সচেতন করে—জীবন কতটা অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন: মাইলস্টোন কলেজ ট্র্যাজেডি: শোক ও ট্রমা মোকাবিলার গাইডলাইন
আপনার কী মনে হয়? এমন দুর্ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? মন্তব্যে জানান।