শিক্ষা খাতে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে একজন যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্যকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই মামলাটি ঢাকার কেরানীগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
মামলার বিবরণ ও অভিযোগ
মামলার বাদী নাসির উদ্দিন, যিনি কেরানীগঞ্জের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। তার দাবি, ২০০৫ সালে তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও ২০১১ সালে তাকে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরবর্তীতে একই পদে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা নিয়মবহির্ভূত বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বিবাদীদের তালিকায় রয়েছেন:
মাউশি চেয়ারম্যান
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জাকির আহমেদ
সাবেক প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন
প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী রাসিদা আক্তার (যিনি বাদীর স্থলে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ)
উপ-আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা
ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
কী ঘটেছিল?
বাদী নাসির উদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী:
২০০৫ সালের ৩ মার্চ পত্রিকায় সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
১৮ মার্চ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে তিনি উত্তীর্ণ হন এবং ২০ মার্চ সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
২০১১ সালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে এবং পরে হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ২২ মার্চ একই পদে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এবং প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী রাসিদা আক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করে নাসির উদ্দিনের কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে এই অনিয়ম চালানো হয়েছে।
আদালতের রায় ও পরবর্তী পদক্ষেপ
মামলাটি গত ১৯ আগস্ট দায়ের করা হয় এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ সহকারী জজ দেবী রাণী রায়ের আদালত এটির শুনানির তারিখ ২৬ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলাটি গ্রহণযোগ্য হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জরুরি
এ ধরনের মামলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির একটি উদাহরণ। এটি শুধু একজন ব্যক্তির অধিকার হরণই নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিকেই দুর্বল করে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এমন অভিযোগের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম রোধ করা যায়।
শেষ কথা
এই মামলার ফলাফল শিক্ষা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি মাইলফলক হতে পারে। আমরা আশা করি, বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
আরও পড়ুন: NTRCA খবর | ৪১,০০০ শিক্ষক নিয়োগের অপেক্ষায়, শীঘ্রই হতে পারে সুপারিশ জারি
আপনার মতামত জানান:
এই মামলা সম্পর্কে আপনার কী মতামত? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও কী ধরনের সংস্কার আনা উচিত? কমেন্টে শেয়ার করুন।