আগামীকাল (রবিবার) রাজধানী ঢাকা এক বিরাট ছাত্র সমাবেশের শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। একদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাহবাগে আয়োজন করছে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ছাত্র সমাবেশ, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পৃথক কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকার রাজনীতিতে বাড়ছে উত্তেজনা, সৃষ্টি হচ্ছে জনসাধারণের কৌতূহল ও আশঙ্কা—সব মিলিয়ে এই সমাবেশ ঘিরে সারাদেশেই বাড়ছে আলোচনা।
ছাত্রদলের বৃহৎ সমাবেশ: ইতিহাস গড়ার প্রস্তুতি
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ছাত্র সমাবেশ হবে। ইতিমধ্যে সারা দেশের জেলা, থানা, মহানগর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের ঢাকায় যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সমাবেশে তারা ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী স্মরণ করবে। মূল উদ্দেশ্য হিসেবে থাকছে তরুণদের কর্মসংস্থান, শিক্ষার্থীদের মানবসম্পদে রূপান্তরের বার্তা এবং সরকারের পতনের পর উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের অবস্থান তুলে ধরা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:
-
ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিষিদ্ধ।
-
নির্ধারিত স্থানে ইউনিটগুলোর অবস্থান বাধ্যতামূলক।
-
জরুরি যান চলাচলে সহযোগিতা।
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোনো গাড়ি প্রবেশ করবে না।
-
ব্যক্তিগত শোডাউন ও মিছিল নিষিদ্ধ।
-
সমাবেশ শেষে স্থান পরিষ্কার রেখে ত্যাগ করতে হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির জানান, “এই সমাবেশ হবে ছাত্রদলের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।”
এনসিপি’র ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা
একই দিনে শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি বড় সমাবেশ। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক মাসব্যাপী পদযাত্রা শেষে এই সমাবেশ তাদের চূড়ান্ত কর্মসূচি। এনসিপি সূত্র জানায়, এই পদযাত্রা তারা দেশের ৬১টি জেলায় সম্পন্ন করেছে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ‘নতুন বাংলাদেশের’ জন্য একটি ইশতেহার প্রস্তুত করেছে, যা এই সমাবেশে ঘোষণা করা হবে।
এনসিপি’র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, “ছাত্রদল ও বিএনপি আমাদের অভ্যুত্থানের বন্ধু। জামায়াত-শিবিরও বন্ধু। তাই কেউ সংঘাত চায় না। কিছু কুচক্রী মহল গুজব ছড়িয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।”
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও জননিরাপত্তা
দুটি বড় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে বাড়ছে উত্তেজনা। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে উভয় সংগঠনই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
উপসংহার
আগামীকাল ঢাকার রাজপথে নামছে লক্ষাধিক তরুণ। কেউ রাজনীতির বার্তা দিতে, কেউ দেশের ভবিষ্যতের রূপরেখা জানাতে। এই কর্মসূচিগুলো দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের নেতৃত্বের একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলে। এখন দেখার বিষয়, কতটা শান্তিপূর্ণভাবে এই শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা শেষ হয়।
আরও পড়ুন: শাহবাগে উত্তপ্ত সংঘর্ষ: ‘জুলাই যোদ্ধা’দের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও পুলিশের হস্তক্ষেপ