নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী ১৬টি নতুন রাজনৈতিক দল প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে তরুণ নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্যতম। তবে, চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য মাঠ পর্যায়ে তদন্ত ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া এখনো বাকি।
প্রাথমিক বাছাইয়ের বর্তমান অবস্থা
রবিবার (১০ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “এনসিপিসহ ১৬টি দলকে মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এর আগে, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ১৪৪টি দলের কোনোটিই প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে, ইসি তাদের ১৫ দিনের সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণের সুযোগ দিয়েছিল।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া
নির্বাচন কমিশন ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোর আবেদন গ্রহণ করে। পরে সময় বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়। এই সময়সীমার মধ্যে ১৪৪টি দল মোট ১৪৭টি আবেদন জমা দেয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে ৬২টি দলকে প্রথম দফায় এবং ৮২টি দলকে দ্বিতীয় দফায় ঘাটতি পূরণের চিঠি দেওয়া হয়। এরপর শর্ত পূরণ করে ১৬টি দল প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তাবলি
বর্তমানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর অধীনে নিবন্ধনের জন্য নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ করতে হয়:
-
কেন্দ্রীয় কার্যালয়: একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কমিটি ও কার্যালয় থাকতে হবে।
-
জেলা ও উপজেলা কার্যালয়: অন্তত ১১টি জেলা (এক-তৃতীয়াংশ) এবং ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানা-তে কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে।
-
সদস্য সংখ্যা: প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ জন ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
সম্প্রতি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন শর্ত শিথিলের সুপারিশ করেছে:
-
জেলা কার্যালয়: অন্তত ৬টি জেলা (এক-দশমাংশ)
-
উপজেলা কার্যালয়: অন্তত ৫০টি উপজেলা (৫%)
-
সদস্য সংখ্যা: ন্যূনতম ৫,০০০ ভোটার
তবে, আরপিও সংশোধন না হওয়ায় ইসি বর্তমান আইন অনুযায়ীই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা
ইসির তথ্যমতে, বর্তমানে ৫০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
আওয়ামী লীগ (নিবন্ধন স্থগিত)
-
বিএনপি
-
জামায়াতে ইসলামী (সম্প্রতি নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে)
-
গণফোরাম, বিএসপি, জাসদ প্রভৃতি
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন করলেও মাত্র ২টি (বিএনএম ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি) নিবন্ধন পেয়েছিল।
পরবর্তী ধাপ কী?
১. মাঠ পর্যায়ে তদন্ত: ইসি কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তারা দলগুলোর কার্যালয় ও সদস্য তালিকা যাচাই করবেন।
২. দাবি-আপত্তি গ্রহণ: তদন্ত শেষে ইসি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আপত্তি আহ্বান করবে।
৩. শুনানি ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে।
উপসংহার
নতুন দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তবে, শর্ত পূরণ ও তদন্ত রিপোর্ট ইতিবাচক হলে আগামী নির্বাচনে নতুন কিছু দল অংশ নিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণ নেতৃত্বাধীন দলগুলোর আবির্ভাব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
আরও পড়ুন: সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ ২০২৫: যুক্ত হচ্ছেন ৪৪ লাখ নতুন ভোটার
আপনার মতামত জানান— আপনি কি মনে করেন নতুন দলগুলো রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে? কমেন্টে শেয়ার করুন!