রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারকে ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও দরবারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিস্তারিত
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজীব।
তিনি জানান, নুরাল পাগলের দরবার শরীফে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং মরদেহ উত্তোলন করে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে পুলিশের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
ঘটনার পটভূমি
৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজ শেষে “ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি”র ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচি শেষে অংশগ্রহণকারীরা দরবারের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বাধা দেয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া সংঘর্ষে পাঁচজন পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা আহত হন।
দরবারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ
সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ভেতরের ভবন ও দরবার শরীফে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের কবর খুঁড়ে মরদেহ বের করে এনে রাজবাড়ী-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নুরাল পাগল গত ২৩ আগস্ট মারা যান। মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা দরবারের ভেতরেই তাকে দাফন করেন। কবরের ওপর প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। তবে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মতে, সেই স্থাপনাটি মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফের মতো দেখতে হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
ঘটনার পর এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত রয়েছে। দরবারের সামনে ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের ধ্বংসস্তূপ দেখতে সেখানে এখনও ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: নূরাল পাগলার দরবারে হামলা ও সহিংসতা: কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন ও অগ্নিসংযোগ