পাকিস্তানে টানা ভারী বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার কারণে প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা প্রায় ৭০০ ছুঁই ছুঁই। শুধু খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশেই গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৯৯ জনে। পাকিস্তানে বন্যা ভয়াবহতার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
১৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানায়, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে বুনের অঞ্চলে অন্তত ২২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। অনেক গ্রাম আকস্মিক বন্যায় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনো জীবিতদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি
শুধু প্রাণহানি নয়, বন্যায় ধ্বংস হয়ে গেছে শত শত বাড়িঘর ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৮০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। ঘরবাড়ির পাশাপাশি গবাদিপশু ও কৃষিজমিও ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। এতে সাধারণ মানুষ মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক মেঘ বিস্ফোরণ
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার বিভিন্ন এলাকায় অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়, যা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর পর ঘটে মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনা, যার প্রভাবে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সোমবার থেকে আবারও ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
আবহাওয়াবিদদের সতর্কতা
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এজন্য জনগণকে সতর্ক থেকে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকার ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তাতার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার মানুষকে।
উপসংহার
পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সামনে আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। এজন্য স্থানীয় মানুষদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: আইন উপদেষ্টা ও বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ