বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত বিষয় হচ্ছে শিক্ষক নিবন্ধন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নিয়োগের চূড়ান্ত দায়িত্ব পালন করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা, বিলম্ব এবং বয়সসীমা সংক্রান্ত সমস্যায় অনেক প্রার্থী ভোগান্তিতে পড়ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে এনটিআরসিএ এবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে।
আর আলাদা করে গণবিজ্ঞপ্তি নয়
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির পর আর নতুন করে কোনো গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে না। পরিবর্তে শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতেই নিয়োগের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অর্থাৎ, যারা শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হবেন, তাদের মধ্য থেকেই সরাসরি নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এতে করে প্রার্থীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
নতুন পরীক্ষার ধাপ ও কাঠামো
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এনটিআরসিএর খসড়া পরিপত্র অনুযায়ী—
বাছাই পরীক্ষা (MCQ বা লিখিত) নেওয়া হবে।
এরপর মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে।
শূন্যপদের দ্বিগুণ প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে।
শূন্যপদের তুলনায় ২০% অতিরিক্ত প্রার্থীকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হবে, যাতে কেউ যোগদান না করলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া যায়।
এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেকটাই বিশেষ বিসিএসের মতো কাঠামোতে সম্পন্ন হবে।
দ্রুত নিয়োগের লক্ষ্য
এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা। অনেক প্রার্থী নিবন্ধন সনদ অর্জন করার পর বয়সসীমার কারণে আবেদন করতে পারেন না। নতুন ব্যবস্থায় এই জটিলতা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনটিআরসিএর যাত্রা ও পরিবর্তন
২০০৫ সালে এনটিআরসিএ কার্যক্রম শুরু করে। তখন শুধু যোগ্যতা সনদ প্রদান করা হতো, আর নিয়োগ হতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ নিয়োগের চূড়ান্ত দায়িত্ব পায়। ইতোমধ্যে ১৮টি নিবন্ধন পরীক্ষা ও ৫টি গণবিজ্ঞপ্তি সম্পন্ন করেছে, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কাজ চলছে। এবার থেকে নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রার্থীদের অপেক্ষা কমানো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।
সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা
শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আসবে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে নিবন্ধন পাস করা প্রার্থীরা দ্রুত নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি কমবে।
উপসংহার
এনটিআরসিএর নতুন পরিকল্পনা দেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। দ্রুত নিয়োগ, বয়স সীমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগের সুযোগ শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জন্য আনন্দঘন খবর: দশম গ্রেড বেতন শীঘ্রই!