রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বুধবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বিএনপি ও এনসিপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৬৫ জন নেতাকর্মী এবং ৬ জন সাংবাদিকসহ মোট ৭১ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের পর উপজেলা সদরে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বুধবার বিকেলে মুরাদনগর উপজেলা সদরে ছাত্র জনতার একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও তার পিতা প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে এই মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। মিছিলটি উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে থেকে থানা চত্বরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আল্লাহু চত্বরে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দ্বারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
এদিকে, একই দিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে প্রেরণ ও রিমান্ড মঞ্জুরের প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রদল একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। এই মিছিল চলাকালীন হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে, যা ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেয়।
আহতদের তালিকা
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছে:
-
এনসিপি পক্ষের নেতাকর্মী: উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মিনহাজুল হক, ইউপি সদস্য মো. শেকন মিয়া, মাসুদুল রানা, ইউনুস মিয়া, মো. কাইয়ুমসহ ৫০ জন।
-
বিএনপি পক্ষের নেতাকর্মী: কায়কোবাদ গ্রুপের ওমর উল্লাহ, ইমন, পারভেজ, কামাল হোসেনসহ ১৫ জন।
-
সাংবাদিকবৃন্দ: শাহ ইমরান, আব্দুল্লাহ আল মারুফ, মঈন নাসের খাঁন রাফি, হাবিবুর রহমান মুন্নাসহ মোট ৬ জন সাংবাদিক।
উভয় পক্ষের বক্তব্য
এডভোকেট ওবায়দুল হক ছিদ্দিকী (মুরাদনগর উপজেলার সাবেক ছাত্র সমন্বয়ক) বলেন, “আমরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করছিলাম। কায়কোবাদের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করছি।”
অন্যদিকে, মিনহাজুল হক (উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী) বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে গিয়েও বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এখানে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া (উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক) অভিযোগ করেন, “আমাদের কর্মসূচির সময় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অনুসারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। আজ তারা পুলিশের সহায়তায় আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে।”
পুলিশ ও প্রশাসনের অবস্থান
স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তবে সংঘর্ষের কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে বলে জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা
মুরাদনগরে গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা আগেও ঘটেছে, তবে এবারের ঘটনায় আহতের সংখ্যা বেশি। স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সর্বশেষ অবস্থা
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনে উভয় পক্ষের নেতাদের সাথে আলোচনা চলছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
সতর্কতা ও পরামর্শ
স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেকোনো প্ররোচনা এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখতে। সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে।
আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
এই ঘটনার আরও কোনো উন্নতি হলে তা আমরা দ্রুত জানিয়ে দেব।
আরও পড়ুন: সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড: বিচারিক রায় নিয়ে বিতর্কের নতুন অধ্যায়