মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের জন্য নানা সময়ে নেক আমল সম্পাদন করে থাকে—নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ বহু ইবাদতে শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, কিছু কাজ রয়েছে যা অজান্তেই সেই অর্জিত পুণ্যকে নষ্ট করে দেয়। একবার আমল বিনষ্ট হয়ে গেলে তার প্রতিদান পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা ও সতর্ক থাকা অপরিহার্য।
১. শিরক করা
শিরক বা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা ইসলামের সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ। কেউ যদি আল্লাহকে এক বলে না মানে বা তাঁর সাথে অন্য কাউকে উপাসনা বা ক্ষমতায় অংশীদার করে, তাহলে তার সব নেক আমল বৃথা হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন—
“যদি তুমি আল্লাহর সাথে শরিক কর, তবে তোমার সব কাজ ব্যর্থ হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আয-যুমার: ৬৫)
২. লোক দেখানোর জন্য আমল
ইবাদত কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে করা আমলকে গোপন শিরক বলা হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“যদি কেউ আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি তাকে এবং তার আমলকে প্রত্যাখ্যান করি।” (মুসলিম: ৭৩৬৫)
৩. তাকদির অস্বীকার করা
আল্লাহ যা নির্ধারণ করেন, তা অবশ্যই ঘটে। তাকদির অস্বীকার করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায় এবং আমলও বাতিল হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“যতক্ষণ না তুমি তাকদিরে বিশ্বাস কর, তোমার দান কবুল হবে না।” (ইবনে মাজাহ: ৭৭)
৪. জ্যোতিষী বা তান্ত্রিকের কাছে যাওয়া
অদৃশ্যের জ্ঞান শুধু আল্লাহর। জ্যোতিষী বা তান্ত্রিকের কাছে যাওয়া গুরুতর গুনাহ, এমনকি নামাজ কবুল না হওয়ার কারণও হতে পারে। (মুসলিম: ৫৭১৪)
৫. আসরের নামাজ বর্জন
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে আসরের নামাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“যে আসরের নামাজ ছেড়ে দেয়, তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।” (বুখারি: ৫৫৩)
৬. নির্জনে পাপ করা
লোকের সামনে ভালো, কিন্তু গোপনে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া আমল নষ্টের অন্যতম কারণ। (ইবনে মাজাহ: ৪২৪৫)
৭. পরনিন্দা ও গিবত
জিহ্বার অপব্যবহার পাহাড়সম নেক আমল ধ্বংস করে দিতে পারে। গিবত, অপবাদ বা মানহানি করলে সেই ব্যক্তির নেক আমল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (বুখারি: ২৪৪৯)
৮. হিংসা
হিংসা এমন এক অন্তরের রোগ যা নিজের আমলকে ধ্বংস করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয়, তেমনি হিংসা নেক আমলকে ধ্বংস করে।” (আবু দাউদ: ৪৯০৩)
৯. জুলুম
অন্যায়ভাবে কারো ক্ষতি করা বা কষ্ট দেয়া কিয়ামতের দিন আমলহীন করে দিতে পারে। এমনকি অত্যাচারীর নেক আমল ভুক্তভোগীর নামে লিখে দেয়া হবে। (মুসলিম: ৬৪৭৩)
১০. খোঁটা দেয়া
দান করার পর উপকারের কথা বলে বেড়ানো বা খোঁটা দিয়ে কষ্ট দেয়া দানকে মূল্যহীন করে দেয়। (সূরা বাকারা: ২৬২)
১১. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক না রাখা বা তাদের বিপদে সাহায্য না করা আমল কবুল না হওয়ার কারণ হতে পারে। (আল আদাবুল মুফরাদ: ৬১)
উপসংহার
আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণগুলো থেকে দূরে থাকা আমাদের প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য। শিরক, রিয়া, হিংসা, জুলুম বা গিবতের মতো গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে আত্মসমালোচনা, তাকওয়া এবং ইখলাসের সাথে ইবাদত করতে হবে। আমল রক্ষা করাই আসল সাফল্যের চাবিকাঠি।
আরও পড়ুন: আল্লাহর অস্তিত্বের যুক্তি: প্রকৃতি ও বুদ্ধির আলোকে