বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিভিন্ন থানাসহ সরকারি স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি লুট হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব হারানো অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, অস্ত্র উদ্ধারে সহায়তাকারীদের জন্য নগদ পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং তথ্যদাতাদের পরিচয় সর্বোচ্চ গোপন রাখা হবে।
পুরস্কারের ধরন ও শর্তাবলি
সরকারের ঘোষণায় জানানো হয়—
পিস্তল বা শটগানের তথ্য দিলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার
চায়নিজ রাইফেলের তথ্য দিলে ১ লাখ টাকা
এসএমজি (সাবমেশিনগান) সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ১.৫ লাখ টাকা
এলএমজি (লাইট মেশিনগান) উদ্ধারে তথ্য দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার
প্রতিটি গুলির জন্য ঘোষণা করা হয়েছে ৫০০ টাকা পুরস্কার
এছাড়া তথ্যদাতার নাম–পরিচয় প্রকাশ করা হবে না, যাতে নিরাপত্তা নিয়ে কেউ শঙ্কিত না হন।
অস্ত্র হারানোর পটভূমি
গত বছরের আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে বিপুলসংখ্যক সরকারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি হয়ে যায়। সর্বশেষ সরকারি হিসাবে দেখা যায়, এখনো প্রায় ১,৩৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২,৫৭,৭২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এসব অস্ত্র বিভিন্ন অপরাধকর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আশ্বাস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কোনো শঙ্কার কারণ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচনে মনোযোগী হবে, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সরকার শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর।
নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি দমন
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম বা নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, তাঁর পরিচয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি বা অপরাধে জড়ায়, তবে সরাসরি তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান
সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়াই, নির্দ্বিধায় লিখুন। তবে ভুল তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করলে তা শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সম্মানহানি হলে প্রতিবাদ জানিয়েও তা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
উপসংহার
অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত এই পুরস্কার ঘোষণাকে অনেকেই ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সরকারের আশা, জনগণের সহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগে দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে। এতে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে না, বরং নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় আয়োজনও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যাবে।
আরও পড়ুন: আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে চিকিৎসক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন