থাইরয়েড ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের অভাবে দেশে হাজারো রোগী বিপাকে পড়েছেন। গত ছয় মাস ধরে রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন (আরএআই) নামের এই ওষুধটি পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে থাইরয়েড ক্যানসার সার্জারি করা রোগীদের চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কবে নাগাদ এই সংকট কাটবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
কেন এই ওষুধ এত গুরুত্বপূর্ণ?
থাইরয়েড ক্যানসারের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারের পর রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন (আরএআই) থেরাপি অত্যন্ত জরুরি। এটি একটি বিশেষ ধরনের তেজস্ক্রিয় ওষুধ, যা ক্যাপসুল আকারে রোগীকে খাওয়ানো হয়। এই চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরে অবশিষ্ট থাকা ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা, যাতে রোগ পুনরায় ফিরে না আসে।
ওষুধটি কেন আমদানি নির্ভর?
বাংলাদেশে এই ওষুধ উৎপাদিত হয় না। এটি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং শুধুমাত্র বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন-এর অনুমোদিত হাসপাতালগুলোতেই এটি সরবরাহ করা হয়। তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকায় এর ব্যবহার কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগীদের কী অবস্থা?
নূরজাহান বেগম (৬০) নামের এক থাইরয়েড ক্যানসার রোগী গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই ওষুধের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর মেয়ে জানান, ওষুধ না পাওয়ায় তাঁর মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে—হাত-পা ফুলে গেছে এবং তিনি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
মো. সবুজ হোসেন নামের আরেক রোগী গত এপ্রিলে অস্ত্রোপচার করেছেন। কিন্তু ওষুধ না পাওয়ায় তাঁর ক্যানসার আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, ফলে তাঁকে পুনরায় অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
কেন এই সংকট?
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় গড়মিলের কারণে ওষুধ আমদানি বিলম্বিত হচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠান ঠিক সময়ে ওষুধ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দরপত্র বাতিল করা হয়। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে যে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ সীমিত পরিমাণে ওষুধ পাওয়া যাবে।
থাইরয়েড ক্যানসার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা
থাইরয়েড গলার একটি গ্রন্থি যা বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থিতে ক্যানসার হলে প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়, কিন্তু আরএআই থেরাপি না পেলে ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে।
কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে ২২টি কেন্দ্রে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
ঢাকায়: বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট
-
জেলায়: বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো
এই সংকটের প্রভাব
-
চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারে অনিচ্ছুক: ওষুধের অভাবের কারণে অনেক সার্জন থাইরয়েড ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করতে চাইছেন না।
-
রোগীদের বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে: যারা সামর্থ্যবান, তারা ভারত বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
-
সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা: বারবার এমন সংকটে সাধারণ মানুষের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা কমছে।
কী করা উচিত?
-
জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ আমদানি: সরকারকে দ্রুততম সময়ে ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
-
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান: বাংলাদেশে এই ওষুধ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা গেলে ভবিষ্যতে এমন সংকট এড়ানো যাবে।
-
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: কেন এই সংকট হলো এবং ভবিষ্যতে কীভাবে প্রতিরোধ করা হবে, তা জনগণকে জানানো দরকার।
শেষ কথা
থাইরয়েড ক্যানসার একটি নিরাময়যোগ্য রোগ, কিন্তু চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এই সংকট সমাধান করে হাজারো রোগীকে অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দেওয়া।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন একটি লবঙ্গ খাওয়ার অদ্ভুত স্বাস্থ্য উপকারিতা
আপনার কি থাইরয়েড ক্যানসার নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে? নিচে কমেন্ট করে জানান!