রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থাৎ ট্রাম্প পুতিন সম্পর্ক এর উত্তাপ দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি রাশিয়ার একটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস তাদের প্রতিবেদনে ট্রাম্প ও পুতিনের সম্পর্ককে দুটি ধাবমান ট্রেনের সাথে তুলনা করেছে—যারা মুখোমুখি ধেয়ে আসছে, কিন্তু কেউই থামতে নারাজ।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ট্রাম্প ও পুতিনের নীতির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। উভয়ই নিজেদের গতিপথে অনড়। ফলে সংঘর্ষ শুধু সময়ের ব্যাপার।”
কিন্তু বাস্তবে কি আসলেই দুই পরাশক্তির মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে? নাকি এটি কেবলই কূটনৈতিক চাপের খেলা?
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ: শুরুটা উষ্ণ ছিল
২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসার পর প্রথমদিকে রুশ-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত দেখা গিয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে হতবাক করে দেয়। এমনকি ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনিক আলাপও হয়েছিল, যেখানে দুজনেই একে অপরের দেশে রাষ্ট্রীয় সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং সামরিক চাপ বাড়ানোর পদক্ষেপ—সব মিলিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্পের আল্টিমেটাম বনাম পুতিনের অনড় অবস্থান
ট্রাম্প সম্প্রতি পুতিনকে ১০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার জন্য চাপ দিয়েছেন, নইলে মার্কিন পক্ষ থেকে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এমনকি রাশিয়ার সীমান্তের কাছে পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
কিন্তু পুতিন ট্রাম্পের এই হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। রুশ নেতা বারবার জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ তার লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত থামবে না। তিনি ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা, ন্যাটো সদস্যপদ বাতিল এবং রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দাবি করে আসছেন।
কূটনৈতিক আলোচনা: শেষ আশা?
যদিও দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা চরমে, তবুও সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গত কয়েক মাসে চারবার মস্কো সফর করেছেন। গত সপ্তাহেও তিনি পুতিনের সাথে বৈঠক করেছেন, যেখানে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিউ স্কুল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিনা ক্রুশ্চেভা বলেছেন, “ট্রাম্প চুক্তি চান, কিন্তু পুতিন বিজয় চান। যতক্ষণ না ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করছে, ততক্ষণ পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।”
সংঘর্ষের সম্ভাবনা কতটা?
সামরিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা এখনও কম। কারণ:
-
ট্রাম্প যুদ্ধ নয়, চুক্তি চান – তিনি নিজেকে একজন দক্ষ আলোচক হিসেবে দেখেন এবং রাশিয়ার সাথে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইবেন।
-
পুতিন সরাসরি মার্কিন বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ এড়াবেন – রাশিয়া ইতিমধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে আছে, পশ্চিমা শক্তির সাথে সরাসরি লড়াই তাদের জন্য বিপজ্জনক।
-
অর্থনৈতিক চাপ কাজ করতে পারে – রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠলেও ট্রাম্প যদি নতুন করে বাণিজ্যিক অবরোধ দেন, তাহলে মস্কো চাপে পড়তে পারে।
শেষ কথা: কূটনৈতিক সমাধানই একমাত্র পথ
ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে সম্পর্কের এই টানাপোড়েন বিশ্ব রাজনীতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে ইতিহাস বলে, পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো কখনও সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায় না। তাই আশা করা যায়, শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে।
স্টিভ উইটকফের সাম্প্রতিক মস্কো সফর ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, হয়তো এখনও একটি চুক্তির সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেটি কতটা টেকসই হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: জাবিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি