ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। মানসিকভাবে অসুস্থ এক মায়ের হাতে প্রাণ হারিয়েছে মাত্র দুই বছরের শিশু সন্তান। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অন্তর্গত কলাতিয়া ইউনিয়নের জৈনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা এমন ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনো শিউরে উঠছেন।
নিহত শিশুর পরিচয়
মৃত শিশুর নাম আব্দুর রহমান (২)। তার মা আতিয়া শারমিন (৩০) কিছুদিন ধরেই মানসিকভাবে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব, স্বামীর সঙ্গে কলহ এবং মানসিক অস্থিরতাই তাকে চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণ
পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার দিন সকালে আতিয়া শারমিন তার ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালবেলায় শারমিনের মা দরজায় কড়া নাড়লেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরে শারমিনের বাবা আবুল হোসেন জোরে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুললে ভেতরে শিশুকে দেখতে পান না। চারপাশে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বিছানার নিচে দুটি ব্যাগে শিশুটির দেহ ও মাথা আলাদা অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই দৃশ্য দেখে পরিবার ও আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশের বক্তব্য
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান—
“প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, শিশুর মা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা
এমন একটি ঘটনার পর আবারও স্পষ্ট হলো যে, মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলা করা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বাংলাদেশে এখনো মানসিক রোগ নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা নেই। অনেক পরিবারই বিষয়টিকে অবহেলা করে, ফলে ভুক্তভোগী ও তার আশপাশের মানুষ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
সমাজের করণীয়
পরিবারে কেউ মানসিকভাবে অস্বাভাবিক আচরণ করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও কলহ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা উচিত।
স্থানীয় সমাজ ও আত্মীয়স্বজনদেরও এ বিষয়ে সচেতন হয়ে সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন।
উপসংহার
কেরানীগঞ্জের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক বড় শিক্ষা। সময়মতো মানসিক চিকিৎসা ও পারিবারিক সাপোর্টের অভাব কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ এটি। শিশুর অকাল মৃত্যু কখনোই পূরণ হওয়ার নয়, তবে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য সবার সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন: নুরাল পাগলের দরবারে হামলা: পুলিশের মামলায় আসামি প্রায় ৩৫০০